📘 WBCS Bengali Compulsory | বোধ পরীক্ষণ | Practice Set – ৪

🖋️ বিষয়: পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন

---

📝 অনুচ্ছেদ:

জলবায়ু পরিবর্তন আজ আমাদের পৃথিবীর এক মহাসঙ্কট। প্রতিদিনকার বৈজ্ঞানিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। বায়ুদূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বরফগলা, খরা, অতিবৃষ্টি — সব কিছুর পেছনে মানুষের কর্মকাণ্ডই দায়ী। শিল্পকারখানার ধোঁয়া, বনাঞ্চল উজাড়, প্লাস্টিক দূষণ প্রভৃতি পরিবেশকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে।

অথচ এই পৃথিবীই আমাদের একমাত্র বাসস্থান। পরিবেশকে ধ্বংস করে মানুষ নিজেকেই ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল শুধু প্রকৃতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব পড়ছে খাদ্য, জল, বাসস্থান এবং মানবস্বাস্থ্যের উপরেও।

এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ভোগবাদী মনোভাব ত্যাগ করতে হবে এবং প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান শিখতে হবে। সচেতনতা, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসের ব্যবহার, এবং গাছপালা রক্ষা করার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করতে পারি।

---

❓ প্রশ্নসমূহ:

1. লেখক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ কী বলে মনে করেন?
2. পরিবেশ দূষণের কী কী পরিণতি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে?
3. লেখক “পৃথিবীই আমাদের একমাত্র বাসস্থান” — এই বক্তব্যের তাৎপর্য কী?
4. এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লেখক কী কী করণীয় বলেছেন?

---

✅ উত্তরসমূহ (WBCS ১০ নম্বর মান অনুযায়ী):

---

🔹 (১) লেখক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ কী বলে মনে করেন?

লেখকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ মানুষের অসচেতন কর্মকাণ্ড। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবন সহজ করেছে, তেমনি তার অপব্যবহার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। শিল্পকারখানার দূষণ, বনাঞ্চল নিধন, বায়ুদূষণ, প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার — সব মিলিয়ে পরিবেশ আজ বিপর্যয়ের মুখে। লেখক বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, এই সকল কাজের মাধ্যমে মানুষ নিজের বাসযোগ্য পরিবেশকে ধ্বংস করছে। একদিকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ উন্নতি করছে, কিন্তু অপরদিকে সেই উন্নতির দোহাই দিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সরাসরি দায়ী।

---

🔹 (২) পরিবেশ দূষণের কী কী পরিণতি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে?

অনুচ্ছেদে পরিবেশ দূষণের বেশ কয়েকটি ভয়াবহ পরিণতির উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে — গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বরফগলা, খরা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি প্রকৃতির চরম প্রতিক্রিয়া। এগুলোর প্রভাবে শুধু পরিবেশ নয়, মানবজীবনের মৌলিক প্রয়োজন যেমন খাদ্য, জল, বাসস্থান, স্বাস্থ্য — সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটায়, খাদ্যশস্য উৎপাদন হ্রাস পায়, বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট দেখা দেয় এবং রোগবালাই বেড়ে যায়। অর্থাৎ, পরিবেশ দূষণ মানেই জীবনের প্রতিটি দিককে অস্থির করে তোলা, যার চূড়ান্ত ফলাফল মানব সভ্যতার অস্তিত্ব সংকট।

---

🔹 (৩) লেখক “পৃথিবীই আমাদের একমাত্র বাসস্থান” — এই বক্তব্যের তাৎপর্য কী?

এই বক্তব্যের মাধ্যমে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ আজ পৃথিবীর প্রতি এমন ব্যবহার করছে যেন সে অন্য কোথাও চলে যেতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, এই পৃথিবীই মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল। আমরা যদি এই বাসস্থানকে নষ্ট করি, তাহলে আমাদের অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে পড়বে। আজ যখন জলবায়ু বিপর্যয়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন বুঝে নিতে হবে যে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য বিকল্প কোনো গ্রহ নেই। তাই পৃথিবীকে রক্ষা করা মানে নিজেদের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা। লেখক এই কথার মাধ্যমে আমাদের পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

---

🔹 (৪) এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লেখক কী কী করণীয় বলেছেন?

লেখক মনে করেন, জলবায়ু সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়, প্রয়োজন মানসিক পরিবর্তন। ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। লেখক বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী বেছে নেওয়া, বন সংরক্ষণ ও গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রকৃতিকে সঙ্গী করে চলতে হবে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।