🖋️ সম্পাদকীয় প্রতিবেদন

বিষয়: বর্ষাকালীন বন্যা ও পশ্চিমবঙ্গে জলব্যবস্থাপনা

পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, বর্ষাকালে এখানে জলাবদ্ধতা ও বন্যা একটি চিরন্তন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে অতিবৃষ্টি এবং বিভিন্ন নদীর জলস্তর বৃদ্ধির ফলে রাজ্যের বহু এলাকা প্লাবিত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নদী নিকাশি ব্যবস্থা, ড্যাম পরিচালনায় সমন্বয়হীনতা ও শহরাঞ্চলের অপ্রতুল পরিকাঠামো। এই প্রেক্ষিতে বর্ষাকালীন বন্যা ও জলব্যবস্থাপনা আজ গভীরভাবে আলোচনার দাবি রাখে।

চলতি বর্ষায় ড্যামোদার ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC)-এর জলছাড়ের ফলে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমানসহ একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কৃষিজমি, বাসস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির মধ্যে তথ্য বিনিময়ে ঘাটতি এবং পূর্বসতর্কতার অভাব জনজীবনে আরও দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাশয় ভরাট ও পলি জমে নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়াও সমস্যাটিকে দীর্ঘমেয়াদী করেছে।

এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে চাই সমন্বিত পদক্ষেপ। নদী পুনঃখনন, আধুনিক জলাধার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শহর ও গ্রামাঞ্চলে সুষ্ঠু নিকাশি পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির মধ্যে সময়োচিত সমন্বয় জরুরি। শুধু ত্রাণ নয়, বরং প্রতিরোধ এবং পরিকল্পিত নগর উন্নয়নের দিকেই অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

বন্যা রোধের প্রয়াসে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। জল-নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে একটি দীর্ঘমেয়াদী, পরিবেশবান্ধব ও প্রযুক্তিনির্ভর নীতিমালা তৈরিই হতে পারে এই সমস্যার টেকসই সমাধান।